একদিকে গুমোট গরম, অন্যদিকে প্রচণ্ড স্যাঁতসেতে আবহাওয়া। তার সঙ্গে দিনভর ব্যস্ততা, কাজের চাপ, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, লেট নাইট। এ সবের প্রথম ছাপ পড়ে ত্বকের উপর। মাঝরাত অবধি কম্পিউটারে কাজ করার সময়ও একইরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয় ত্বক। আপনি জানতেও পারেন না, ঠিক ওই মুহূর্তে মানসিক চাপ, দূষণ আর প্রযুক্তির মতো অন্তত তিনটে মারাত্মক টক্সিন হামলা করছে আপনার উপর। শুধু ত্বকের ক্ষতিই নয়, আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপরেও প্রভাব ফেলে এই টক্সিনগুলো।
মানসিক চাপ
ডেডলাইনের মোকাবিলা করা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন নানা প্রতিশ্রুতি রাখা, ঘরের কাজ সামলানো, আমাদের কাজের তালিকা আর ফুরোনোর নয়। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলশ্রুতি, অফুরন্ত মানসিক চাপ। তা ছাড়া নানা আবেগের টানাপোড়েনের ছাপও পড়ে ত্বকের উপর। অতিরিক্ত মানসিক চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করতে আমাদের শরীর কর্টিসল নামে একটি স্ট্রেস হরমোন উৎপাদন করে। এর ফলে ত্বকের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায় এবং ব্রণ-ফুসকুড়ির উপদ্রব দেখা দেয়। ত্বকে একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো সমস্যা থাকলেও তা বেড়ে যেতে পারে। ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে দাগছোপ, বিবর্ণভাব, বলিরেখার মতো সমস্যাও দেখা দেয়।
সমাধানের উপায়
এই সমস্যার একমাত্র সমাধান মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। রোজ বেশি করে জল খেলে আর তার সঙ্গে ভালো ফেস স্ক্রাব ব্যবহার করলে এই বিবর্ণভাব অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ডাবের জল, লেবুজল, ঘোল আর তার সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জল খেতে পারলে ত্বকের অনেক উন্নতি হবে। সয়াবিন জাতীয় আর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যে কোনও খাবার ত্বক টানটান রাখে। তবে ত্বকে যদি ব্রণ থাকে, স্ক্রাব ব্যবহার করবেন না। বদলে কোমল, অয়েল ব্যালান্সযুক্ত ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ধুলো, দূষণ, ফ্রি রাডিকাল
শহুরে ভারতের প্রতিটি কোনায় আজ যেভাবে ব্ল্যাকহেডের প্রকোপ বাড়ছে, তার একমাত্র কারণ বাতাসের দূষণ। দূষণের কণিকা আমাদের ত্বকের ভিতরে ঢুকে পড়ে ভীষণ ক্ষতি করে দেয়। দূষণ কণিকা ত্বকে ঢুকে ফ্রি রাডিকাল তৈরি করে। তার ফলে ত্বকের সুস্থ কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ত্বকে সূক্ষ্ম রেখা, দাগছোপ, জ্বালাভাব, ফুসকুড়ি তারই অনিবার্য ফল। ত্বকে সারাক্ষণই একটা জ্বালা জ্বালা ভাব অনুভূত হয়, ত্বক দ্রুত উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে এবং বুড়িয়েও যায় তাড়াতাড়ি।
সমাধানের উপায়
বাইরে পা দেওয়ার আগে কখনওই সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না! সানস্ক্রিন ত্বকে বয়সের ছাপ ফুটে ওঠা বেশ অনেকটাই প্রতিরোধ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আর একটা অত্যন্ত জরুরি বিষয় হল, দূষণের থাবা থেকে ত্বক পরিষ্কার রাখা। ফলে ক্লেনজিংও প্রতিদিনের অভ্যেস করে তুলতেই হবে। বাইরে থেকে ফিরে সাধারণ ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুলেই চলবে। সঙ্গে সপ্তাহে একদিন স্ক্রাবিং আর মাসে একদিন ফেশিয়াল করে নিতে হবে। রোদে বেরোনোর ফলে ত্বকে জ্বালাভাব হলে শসা থেঁতো করে লাগান, আরাম পাবেন। গোলাপজল বা অন্য কোন ফেসমিস্টও ব্যবহার করতে পারেন।
অনলাইন থাকা
সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে কাটালে ত্বকে বিবর্ণভাব, অ্যালার্জি, অকালে বয়সের ছাপ, বলিরেখা দেখা দিতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ আবার ত্বকের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ হিসেবে মোবাইল ফোনের তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণকেও দায়ী করেন। তা ছাড়াও মোবাইল ফোন যেহেতু কান ও মুখের সংস্পর্শে আসে, তাই তা থেকে যে কোনও সময় কঠিন সংক্রমণ হতেই পারে। সারাক্ষণ মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপে ঘাড় গুঁজে থাকলেও মুখের ত্বক আলগা হয়ে ঝুলে যেতে পারে।
সমাধানের উপায়
একটানা কাজ করবেন না, মাঝেমাঝে বিরতি নিন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার আর ভেজা টিস্যু হাতের কাছে রাখুন, যাতে প্রয়োজনমতো হাত মুছে নিতে পারেন। ফোন থেকে নির্গত বিকিরণ যাতে হাতের ক্ষতি না করতে পারে, তার জন্য হাতে পাতলা করে সানস্ক্রিনও লাগিয়ে রাখতে পারেন।
No comments