ফুলের জগতে নিতান্ত মধ্যবিত্ত, সাদামাটা ফুল হিসেবে যদি কাউকে ভাবা যায়, তা হলে গাঁদা। গোলাপের বাহার বা রং তার নেই, গন্ধের দিক থেকেও এমন কিছু আহামরি নয় সে, কিন্তু তাকে ছাড়া একটি দিনও চলে না বাঙালির! যে কোনও পুজোপার্বণ গাঁদাফুল ছাড়া অসম্পূর্ণ, এমনকী, ঘর বা অনুষ্ঠানের মঞ্চ কম খরচে সাজাতেও ডাক পড়ে গাঁদার মালার! কিন্তু শীতের দিনে বাগান ভরা গাঁদার উজ্জ্বলতা যেভাবে চোখ জুড়িয়ে দেয়, তারও কোনও তুলনা নেই!
কেমন হবে যদি বলি, গাঁদাফুলের সেই উজ্জ্বলতা এবার আপনার ত্বকেও পেতে পারেন আপনি? ত্বকের যে কোনও সমস্যা কমিয়ে মুখ কোমল, মসৃণ আর ঝলমলে করে তুলতে দুর্দান্ত কাজ করে গাঁদাফুল। অবাক হচ্ছেন? তা হলে ঝটপট চোখ বুলিয়ে নিন গাঁদাফুলের গুণাগুণে!
ত্বকের পক্ষে গাঁদাফুল কেন উপকারী?
১. গাঁদাফুলের অ্যান্টিসেপটিক উপাদানের কথা কে না জানে! ছোটবেলায় কোথাও কেটেছড়ে গেলে একমুঠো গাঁদাপাতা দাঁতে চিবিয়ে লাগিয়ে দেওয়াই ছিল রেওয়াজ! কাজেই তার ফুলেও যে অ্যান্টিসেপটিক গুণ থাকবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! ত্বককে যে কোনওরকম সংক্রমণ থেকে বাঁচায় গাঁদাফুল।
২. নিয়মিত গাঁদাফুলের ব্যবহারে ত্বকে থাবা বসাতে পারবে না বয়স। কারণ গাঁদাফুল আপনার ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন জোরদার করে,ফলে ত্বকও থাকে টানটান, বলিরেখামুক্ত।
৩. মুখের সেবাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে ত্বককে তেলমুক্ত ঝকঝকে রাখে গাঁদাফুল।
৪. গাঁদাফুলের অ্যান্টি অক্সিডান্ট গুণ ত্বক পরিষ্কার রাখে, ত্বকে নতুন কোষের জন্ম দিতেও সাহায্য করে।
ব্যবহার করুন গাঁদাফুলের ফেস প্যাক
প্রতিদিনের রূপচর্চায় যোগ করে নিন গাঁদাফুল। রইল গাঁদাফুল দিয়ে তৈরি তিনটি দুর্দান্ত ফেস প্যাক যা আপনার ত্বক রাখবে উজ্জ্বল আর টানটান।
গাঁদাফুল আর মধুর ফেস প্যাক
দাগহীন, মসৃণ ত্বক চাইছেন? গাঁদাফুলের পাপড়ি বেটে নিন। এক টেবিলচামচ মতো হলেই হবে। তাতে এক চাচামচ দুধের সর আর আধ চাচামচ মধু যোগ করুন। ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে সমানভাবে লাগান। 20 মিনিট রেখে তারপর বৃত্তাকারে ঘষে ঘশে কিছুক্ষণ মাসাজ করুন, তারপর ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। দুধের সরের ল্যাকটিক অ্যাসিড গায়ের রং উজ্জ্বল করে। গাঁদাফুল ত্বকের টেক্সচার মসৃণ করে তোলে আর মধু ত্বক আর্দ্র রাখে, মুখে বয়সের ছাপও পড়তে দেয় না।
গাঁদাফুল আর টক দইয়ের ফেস প্যাক
স্বাভাবিকভাবে দীপ্তিময়, উজ্জ্বল ত্বক পেতে হলে বেছে নিতে পারেন এই প্যাকটি। এর জন্য আপনার দরকার এক টেবিলচামচ পরিমাণ বেটে নেওয়া গাঁদাফুলের পাপড়ি, এক চাচামচ টক দই, আধ চাচামচ লেবুর রস আর এক চাচামচ গোলাপজল। সব কিছু মিশিয়ে একটা মসৃণ পেস্ট করে নিন। মুখে লাগিয়ে না শুকোনো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, তারপর ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিন। বলিরেখা দূর করে ত্বকে তারুণ্যের ঝিলিক ফিরিয়ে আনতে এই প্যাকটি দারুণ ভালো কাজ করে। সপ্তাহে দু’বার লাগালেই তফাৎ বুঝতে পারবেন।
গাঁদাফুল আর বেসনের ফেস প্যাক
রূপচর্চায় বেসনের ব্যবহার প্রচলিত সেই কবে থেকে! এবার তার সঙ্গে মেশান গাঁদাফুল আর দুধের গুণ। এক টেবিলচামচ গাঁদাফুলের বেটে নেওয়া পাপড়ি, এক চাচামচ বেসন, এক চাচামচ কাঁচা দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। পরিষ্কার মুখে আর গলায় এই পেস্টটি লাগিয়ে না শুকোনো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিনবার করলে ত্বক চোখে পড়ার মতো নরম, মসৃণ আর উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
No comments