বাণীব্রত দত্ত, ভারত
২০১৮-র থেকে এবার ত্রিপুরার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। এবার সেখানে যেমন বাম-কংগ্রেসের জোট হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিজেপিকেও এবার জোট বিহীন অবস্থায় লড়াই করতে হতে পারে।
উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যে ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে বিধানসভা নির্বাচন। তবে একইসঙ্গে ২ মার্চ ভোট গণনা। তবে ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর-পূর্বে যে ফল বিজেপি এবং তার সঙ্গীরা করেছিল, তা বজায় রাখতে কঠিন লড়াই করতে হবে বিজেপিকে। এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে এই নির্বাচন কংগ্রেসের পক্ষে টিকে থাকার পরীক্ষা।
ত্রিপুরার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি : এবার ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি শুধুমাত্র বাম-কংগ্রেস জোটের মুখোমুখি হবে না, উপজাতি এলাকায় তাদেরকে মুখোমুখি হতে হবে প্রদ্যোৎ মানিক্য দেববর্মনের তিপ্রা মোথারও। যে ইন্ডিজেনায় ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা অর্থাৎ আইপিএফটিকে সঙ্গে করে বিজেপি ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা ইতিমধ্যেই তিপ্রামোথার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। আইপিএফটি প্রধান জানিয়েছেন, তারা বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকবেন কিনা তা নিয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রদ্যোৎ মানিক্য দেববর্মন ইতিমধ্যেই তিপ্রাল্যান্ডকে প্রধান নির্বাচনী ইস্যু করেছেন। তিনি বলেছেন, তাদের আলাদা রাজ্যের দাবিকে লিখিতভাবে সমর্থন করলে শুধু বিজেপি কেন, তারা বাম-কংগ্রেসের জোটেও সামিল হতে পারেন। তৃণমূল জানিয়েছে, তারা বাম-কংগ্রেসের জোটে সামিল হবে না। অন্যদিকে আলাদা তিপ্রাল্যান্ডেরও বিরুদ্ধে তারা।
আইপিএফটি এবং তিপ্রা মোথার সংযুক্তিকরণ নিয়ে আলোচনা :
এব্যাপারে সব থেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল শনিবার রাতে গুয়াহাটিতে তিপ্রা মোথার সঙ্গে আইপিএফটির সংযুক্তিকরণ নিয়ে আলোচনা। দুদলের তরফেই এই আলোচনার কথা স্বীকার করে নিয়ে হয়েছে। জানা গিয়েছে, সংযুক্তিকরণ হলে দলের পতাকা এবং প্রতীক কী হবে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে ত্রিপুরা বিধানসভায় ৬০ টি আসনের মধ্যে ২০ টি আসন উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। এই ২০ টি ছাড়াও আরও ৫-৭ টি আসনে তিপ্রা মোথার কিংবা আইপিএফটির প্রভাব রয়েছে। এই আলোচনার আগে তিপ্রা মোথা জানিয়েছিল তারা ৬০ টি আসনের মধ্যে অন্তত ৪৫ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। যদি এই দুদলের সংযুক্তিকরণ হয় কিংবা কোনও জোট হয়, তাহলে ২০১৮-র মতো নির্বাচনের আগে বিজেপির কোনও জোটসঙ্গী এবার থাকবে না।
মেঘালয়ের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি : মেঘালয়ে মেঘালয় ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ক্ষমতায় রয়েছে। এই জোটে রয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এবং বিজেপি। তবে মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার এনপিপি এককভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের দাবি গত পাঁচ বছরে রাজ্যে যে উন্নয়নের কাজ হয়েছে, তাতে ২০২৩-এ তারা নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাবে। তবে রাজ্যের প্রাক্তন কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা বেশ কয়েকজন কংগ্রেস বিধায়ককে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায়, তৃণমূল এবার সেখানে অন্যতম রাজনৈতিক শক্তি, এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে কংগ্রেসের অনেক নেতাই দলত্যাগ করায় প্রার্থী নির্বাচন করতে তারা সমস্যায় বলেই জানা গিয়েছে। একসময়ে মেঘালয়ে ক্ষমতা থাকা কংগ্রেসের কাছে এবারের নির্বাচন রাজ্যে টিকে থাকার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
নাগাল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতি : এবারের বিধানসভা নির্বাচনে নাগাল্যান্ডে বিজেপি এবং ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। এবারের নির্বাচনে বিজেপি সেখনকার ৬০ টি আসনের মধ্যে ২০ টিতে এবং জোটসঙ্গী ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি ৪০ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ২০১৮-র নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যে ১২ টি আসন জিতেছিল। যদি ভোটের আগে পূর্ব নাগাল্যান্ডের ছটি জেলা নিয়ে ফ্রন্টিয়ার নাগাল্যান্ড গঠনের দাবি জোরদার হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের প্রস্তুতি খুব একটা সন্তোষজনক নয়।
No comments