বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের ভাঁড়ারেও টান পড়তে আরম্ভ করে। তাই যাঁরা কুড়ির কোঠায় থাকাকালীন মুখে অতিরিক্ত তেলাভাবে সাঙ্ঘাতিক বিব্রত হতেন, তাঁরাও তিরিশের কাছাকাছি পৌঁছেই টের পেতে আরম্ভ করেন যে বর্ষাকালটা শেষ হওয়া মাত্রই ত্বকে টান পড়ছে। বিশেষ করে বেশিক্ষণ এসিতে থাকলে বা জল দিয়ে মুখ ধুলেই আর্দ্রতা হারাচ্ছে তা। এই পরিস্থিতি থেকে ঝটপট বেরনোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে আপনাকেই, কারণ ত্বক আর্দ্রতা হারাতে আরম্ভ করলেই কিন্তু বলিরেখা পড়ার আশঙ্কাও বাড়ে। আর বলিরেখা মানেই বয়সের ছাপ।
প্রথমেই খেয়াল রাখবেন, খুব বেশিক্ষণ ধরে স্নান করা, বারবার জলের ঝাপটা দিয়ে মুখ ধোওয়া, স্ক্রাবিং করার ফলে আপনার ত্বক দ্রুত হারে আর্দ্রতা হারাতে আরম্ভ করবে। তাই মুখ ধোওয়া বা তোয়ালে দিয়ে ঘষে মুখ মোছার আগে সতর্ক হওয়া উচিত। আপনাকে এমনই ফেস ওয়াশ বা টোনার বেছে নিতে হবে যা প্রাকৃতিক ও ক্ষতিকারক কেমিক্যালমুক্ত। খুব চড়া রং বা সুগন্ধিযুক্ত প্রডাক্ট লোভনীয় হলেও তা থেকে দূরে থাকারই চেষ্টা করুন। যাঁরা ত্বকের শুষ্কতার সঙ্গে লড়াই করছেন, তাঁরা কোনও অ্যালকোহল বা প্রিজারভেটিভযুক্ত প্রডাক্টও ব্যবহার করবেন না, তাতে ত্বকে প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তার চেয়ে প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
তৈরি করে নিন আপনার ক্লিনজার : অলিভ অয়েল বা খাঁটি, কোল্ড প্রসেড নারকেল তেল লাগিয়ে নিন মুখে আর গলায়। তার পর গরম জলে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে নিংড়ে নিন, আলতোভাবে মুখের উপর রাখুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে সরিয়ে নিন, তার পর মুছে ফেলুন বাড়তি তেল। সারাদিন কাজকর্মের পর বাড়ি ফিরে এইভাবে ত্বক পরিষ্কার করুন, তা একেবারে ভিতর থেকে ঝরঝরে থাকবে।
সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করুন প্রাকৃতিক স্ক্রাব: আধকাপ চিনি আর দুই-আড়াই টেবিলচামচ অলিভ বা নারকেল তেল আর কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন। স্নানের আগে এই স্ক্রাব লাগিয়ে নিন মুখসহ পুরো শরীরে। বাদ দেবেন না হাঁটু, কনুই, গোড়ালির মতো অংশগুলিও।
ঠান্ডা দুধ ব্যবহার করলে ত্বক থাকবে কোমল: ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে গেলেই জ্বালাভাব, চিড়বিড়ানিও টের পাবেন। সেই সময়ে আপনার সহায় হতে পারে ঠান্ডা দুধের কোমল স্পর্শ। ঠান্ডা দুধে তুলো ভিজিয়ে নিন প্রথমে তার পর তা কমপ্রেসের মতো মুখে লাগিয়ে খানিকক্ষণ শুয়ে থাকুন চুপচাপ। নিয়মিত ব্যবহার করলে আর্দ্রতা ফিরতে বাধ্য।
ফেস প্যাক তৈরি করুন ফল দিয়ে: পাকা পেঁপে বা অ্যাভোকাডোর শাঁস, অলিভ/ নারকেল তেল আর মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিন। তার পর এই প্যাক লাগিয়ে রাখুন মুখে, গলায়, হাতে। ১৫-২০মিনিট পর ধুয়ে নিয়ে ময়েশ্চরাইজার লাগিয়ে নিন।
ময়েশ্চরাইজার হিসেবে নারকেল তেল আদর্শ: অতি শুষ্ক ত্বকে নারকেল তেল খুব ভালো ময়েশ্চরাইজার। বিশেষ করে রাতে শোওয়ার আগে নারকেল তেল তো লাগানোই যায়। যাঁদের পা ফাটার সমস্যা আছে, তাঁরাও এক পরত নারকেল তেল লাগিয়ে মোজা পরে শুতে যান, হাতে-নাতে ফল পাবেন।
স্নানের পর ময়েশ্চরাইজার আবশ্যক: সারা বছরই স্নানের পর ভালো করে ময়েশ্চরাইজ়ার লাগাতেই হবে। অ্যালো ভেরা জেল আর নারকেল তেলের মিশ্রণ খুব ভালো ময়েশ্চরাইজ়ার হিসেবে কাজ করে। কেবল মুখে ময়েশ্চরাইজ়ার লাগালে কিন্তু হবে না, গোটা শরীরেই লাগাতে হবে। গাঢ় ময়েশ্চরাইজার আপনাকে বেশি সুরক্ষা দিতে সক্ষম, সেটাও মনে রাখবেন প্লিজ!
No comments