পুরুষের প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার ৩৬০ জন। যেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৬ হাজার ৭৩০ জনের। অন্যদিকে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার ২১১ জন এবং মারা গেছেন ৪৬৫ জন।
২০১৫ সালে বিবিসির এক রিপোর্টে দেখা যায়, প্রোস্টেট ক্যান্সারে পুরুষদের মৃত্যু হার ১১ হাজার ৮১৯। অন্যদিকে স্তন ক্যান্সারে নারীর মৃত্যু সংখ্যা ১১ হাজার ৪৪২ জন। এক্ষেত্রে রিপোর্টে বলা হয়, স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে যে পরিমাণ ফান্ড বা অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে, প্রোস্টেট ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও তেমন ফান্ড ও সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত।
একজন পুরুষের কোনো লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই প্রায় দুই দশক ধরে প্রোস্টেট ক্যান্সার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বর্তমানে এটি পরীক্ষা করার আলাদা কোনো পদ্ধতি নেই। চিকিৎসকরা মূলত বায়োপসি ও পিএসএ টেস্টের সমন্বয়ে এটি নির্ণয় করেন।
৫০ বছরের উর্ধ্বে পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। সেইসঙ্গে পরিবারের অন্য কারো এই ক্যান্সার থাকলেও ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে পুরুষের মূত্রনালীর উপর চাপ বেড়ে যায়। এ ছাড়াও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে -
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
বারবার বাথরুমে যাওয়া
প্রস্রাবের সময় অস্বস্তি লাগা
ধীরে ধীরে প্রস্রাব হওয়া
প্রস্রাবের বেগ থাকলেও প্রস্রাব না হওয়া ইত্যাদি।
মূলত বয়স আর বংশগতিই প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রধান কারণ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অতিরিক্ত ওজন, ডায়েট কিংবা অনিয়মিত ব্যায়াম এই ক্যান্সারের ঝুঁকি আরু বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ ডায়েট যেমন প্রোস্টেট ক্যান্সারের মাত্রা বাড়াতে পারে; তেমনি নিয়মিত শরীরচর্চা এর ঝুঁকি কমাতে পারে!
তাই প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। তবে কয়েকটি খাবার আছে যেগুলো নিয়মিত খেলে পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়া ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। জেনে নিন তেমনই ৭টি খাবার সম্পর্কে-
টমেটো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় যেকোনো ধরনের ক্যান্সার বা টিউমারের ঝুঁকি কমায়।
আমেরিকার পুষ্টি বিভাগের গবেষণায় দেখা গেছে, যতো বেশি মাছ খাওয়া যায়; প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি ততই কমতে থাকে।
গ্রিন টি’তে বিদ্যমান জ্যান্থেইন, এপিক্যাটেচিন, ক্যাটেচিন ও এপিগ্যালাকোচিন প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
ব্রোকলির স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। এই সবজিতে প্রাপ্ত সালফোরেফেন প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি ও প্রভাব দু’টোই কমাতে কার্যকরী।
মাশরুমের হাজারো স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে মাশরুম। নিয়মিত মাশরুম খেলে টিউমারের বিটা গ্লুকোন কমে যায়।
ডালিমের মধ্যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ইলাজিটানিন থাকে, যা ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার কমাতে কার্যকরী।
গোলমরিচে বিদ্যমান ক্যাপাসাইসিন ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস যেমন জরুরি; তেমনি একটি সুস্থ জীবনধারাও এই ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন- এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বীর্যপাত প্রোস্টেট ক্যান্সারে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
No comments