Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সামান্য সতর্ক হয়ে বর্ষার রোগ থেকে বাঁচুন

বর্ষাকালে এক-আধদিন বৃষ্টিতে না ভিজলে হয়  না, ভিজলে নানা অসুখবিসুখের আশঙ্কা চেপে ধরে৷ কী করলে তা থেকে দূরে থাকা যায়, তা জেনে নিন৷
সতর্ক থাকলেই এড়ানো যায় পতঙ্গবাহিত রোগের আক্রমণবর্ষা এলেই সবচেয়ে যে অসুখগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, সেগ…





বর্ষাকালে এক-আধদিন বৃষ্টিতে না ভিজলে হয়  না, ভিজলে নানা অসুখবিসুখের আশঙ্কা চেপে ধরে৷ কী করলে তা থেকে দূরে থাকা যায়, তা জেনে নিন৷


সতর্ক থাকলেই এড়ানো যায় পতঙ্গবাহিত রোগের আক্রমণ

বর্ষা এলেই সবচেয়ে যে অসুখগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, সেগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতেই আসবে ম্যালেরিয়া আর ডেঙ্গির নাম। ঠান্ডা-গরমে সামান্য সর্দি-জ্বর হলেও আমরা আতঙ্কে ভুগতে আরম্ভ করি৷ ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. জয়দীপ ঘোষ বলছেন, ‘‘ম্যালেরিয়ার লক্ষণ হচ্ছে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, সেই সঙ্গে গা ব্যথা-মাথা ব্যথা শুরু হয়। ডেঙ্গিতেও মোটামুটি তাই হয়। ডেঙ্গির জ্বর দিন সাতেক পর থেকে কমতে আরম্ভ করে, ম্যালেরিয়ার সঠিক চিকিৎসা না হলে কিন্তু বিপদ হতে পারে। তাই আমরা দিন দুয়েকের মধ্যে জ্বর না কমলে আর দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া ও রক্ত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিই। বর্ষার জলে ভিজে সাধারণ সর্দি-জ্বর হলে কিন্তু এর মধ্যেই সেরে যাওয়ার কথা।’’ ডেঙ্গি আর ম্যালেরিয়া এড়ানোর জন্য বাড়ির আশপাশে জল জমতে দেবেন না। ডা. ঘোষ বলছেন, ‘‘ডেঙ্গির মশা পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ে। তাই বাড়ির বাথরুমেও জল জমিয়ে রাখবেন না। দু’-এক দিন সেটা ব্যবহার না করলেই কিন্তু জলে মশার লার্ভা জন্মায়, সেটা খালি চোখে দেখা যায় না। ম্যালেরিয়ার মশা জন্মায় আবার নোংরা জলে। তাই বাড়ির আশপাশে নর্দমা থাকলে নিয়মিত ব্লিচিং পাউডার দিন, পরিষ্কার করান। কোথাও জল জমতে দেবেন না, ডাব বা নারকেলের খোলা বা টায়ার ইত্যাদিও যেন না পড়ে থাকে। কুলার পরিষ্কার করান।’’

ম্যালেরিয়ার মশা কামড়ায় রাতের অন্ধকারে, ডেঙ্গির মশা ভোরবেলা। রাতে মশারি টাঙিয়ে শোওয়া সবচেয়ে ভালো। সম্ভব না হলে অন্তত রেপেলেন্ট লাগান বা ধূপ জ্বালান। ডা. ঘোষ পরামর্শ দিচ্ছেন গা-হাত-পা ঢেকে রাখার, ‘‘সন্ধের পর যদি এমন কোথাও যেতে হয় যেখানে মশা কামড়ানোর আশঙ্কা আছে, তা হলে হাত-পা ঢাকা পোশাক পরে যান। আর ভোরের দিকে মশারি খোলা বা রেপেলেন্ট বন্ধ করার অভ্যেস থাকলে ত্যাগ করুন, কারণ ভোরের বেলা মশা কামড়ালেও বিপদ হতে পারে। আর জ্বরের সঙ্গে যদি বমি, গায়ে চুলকানি বা জন্ডিসের মতো উপসর্গ থাকে, তা হলে কিন্তু দু’দিনও অপেক্ষা করার দরকার নেই, তখনই ডাক্তারের কাছে যান।’’


পেটের সমস্যা ঠেকান

পেটের সমস্যাও বিলক্ষণ ভোগায় এই সময়টায়। ইন্টারনাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ডা. অনুপ মল্লিক বলছেন, ‘‘বর্ষায় এমনিতেও জলস্তর উপরে উঠে আসে, রাস্তাঘাট বা নর্দমাও জল জমে উপচে পড়ে। যদি সেটা কোনওভাবে পানীয় জলের উৎসের সঙ্গে মেশে, তা হলে পেটের গন্ডগোল হতে পারে। ঠিক এই কারণেই আন্ত্রিক, ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, ই কোলাই, টাইফয়েডের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব এই সময়ে বেশি দেখা যায়।’’ এই পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকার উপায় কী? ডা. মল্লিকের পরামর্শ, ‘‘খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিচ্ছন্নতা মানা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে।’’ যেখানে সেখানে জল খাবেন না, সম্ভব হলে জল ফুটিয়ে পান করুন। ওয়াটার ফিল্টার বা পিউরিফায়ার থাকলেও চলবে, সিল করা বোতলের জলও বেশ নিরাপদ। একেবারে ফুটপাথের খাবার, বিশেষ করে যেগুলো খুলে বা কেটে রেখে বিক্রি করা হয়, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। রাস্তায় বিক্রি হওয়া লেবুর জল, শরবত ইত্যাদি থেকেও সাবধান। রান্না করা খাবারে নোংরা জল পড়ছে কিনা বা যে জলে থালা ধোওয়া হচ্ছে, সেটা কতটা পরিষ্কার, সে বিষয়েও সতর্ক থাকুন। ডা. ঘোষ বলছেন, ‘‘যে জলে রাস্তার খাবারের প্লেটগুলো ধোওয়া হয়, সেটা থেকেও কিন্তু অনেক রোগ ছড়ায়। সে তুলনায় রেস্তোরাঁগুলো নিরাপদ। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি বাইরে খাওয়া এই সময়টায় এড়িয়ে চলতে পারেন, তা হলে।’’ বাড়িতে কম-তেলমশলা দিয়ে সাধারণ যে রান্নাটা হয়, সেটা খাওয়া যেতে পারে অনায়াসে। এমনকী রোগীকে কেবল সেদ্ধ, বিস্বাদ খাবার খাওয়ার পরামর্শও আজকাল ডাক্তাররা দেন না। সেই সঙ্গে বলেন প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে। ফলমূল-শাকসবজিও খাওয়া যায় অন্য যে কোনও ঋতুর মতোই, কেবল তা খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে আগে। শাক বা স্যালাডে খাওয়ার কাঁচা পাতা গরম জলে ডুবিয়ে রেখে জীবাণুমুক্ত করে তবেই খান, খুব ভালো হয় কিছুদিন এই ধরনের পাতাজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকলে।


চর্মরোগের দাওয়াই

ভিজে গায়ে বেশিক্ষণ থাকবেন না। রাস্তায় ভিজে গেলে বাড়িতে এসে স্নান করে শুকনো করে মুছে ফ্রেশ পোশাক পরুন। অন্তর্বাস বা মোজা যেন স্যাঁতসেঁতে না হয়। অফিসে অতি অবশ্যই এক সেট তোয়ালে, পোশাক, চটি রাখুন। অফিস যাওয়ার পথে ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে গা-হাত শুকনো করে মুছে পোশাক বদলে নিন৷ বেশিক্ষণ ভিজে গায়ে থাকলেই কিন্তু ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে৷ পা পরিষ্কার রাখুন অবশ্যই, সম্ভব হলে ঢাকা জুতো পরবেন না। পা ভিজে থাকলেও চর্মরোগের আশঙ্কা বাড়ে৷ সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরুন৷


চোখের ইনফেকশন হলে বাড়িতে থাকুন

দীর্ঘদিন স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া বজায় থাকলে চোখেও নানা ধরনের ইনফেকশন হতে পারে৷ সমস্যা হচ্ছে, এই ধরনের ইনফেকশনগুলো খুব ছোঁয়াচে হয়৷ চোখ লাল হয়ে চুলকালে, আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধে হলে বা ফুলে উঠলে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে৷ সেই সঙ্গে স্কুল-কলেজ বা অফিসে যাওয়া স্থগিত রাখতে হবে কয়েকদিনের জন্য৷ তা না হলে কিন্তু রোগ ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত৷ রোগীর ব্যবহার করা রুমাল, পোশাক, তোয়ালে, সাবান ইত্যাদি অন্য কারও ব্যবহার করারও দরকার নেই৷

No comments